0
  আল্লামা রেজভী সাহেব হুজুর কেবলার সংক্ষিপ্ত জীবনী ও কর্ম



পরিচয়ঃ
আধ্যাত্মিক সাধনার ক্ষেত্রে একজন শীর্ষস্থানীয় ওলিআল্লাহ। যিনি শরীয়ত ও মারেফাতের অতি উচ্চ মর্যাদাশালী আল্লাহর অলী । হিজরী ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রায় ১২৮০ হিজরী সনে মোজাদ্দেদে জামান, ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী আকবর আলী রেজভী সুন্নী আল ক্বাদেরী মাদ্দা জিল্লুহুল আলী বাংলাদেশের ময়মোহনসিংহ জেলার লংঙ্কাখলা গ্রামে শুভাগমন করেন। যিনির পিতা ছিলেন একজন সুযোগ্য আলেম, আল্লামা মাওলানা শহর আলী রেজভী সুন্নী আল ক্বাদেরী। আল্লামা রেজভী সাহেব হুজুর কেবলা এমন এক যুগ সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের জমিনে আগমন করেন, যখন ইংরেজ শাসন করছিল এই ভারত উপমহাদেশে। মুসলমানদের সমাজে রাসুলে পাকের হাজার হাজার সুন্নাত দাফন করে নতুন নতুন বিদাত চালু করে। এই যুগ সন্ধিক্ষণে তিনি বাতিল ফেরকাদের সাথে মুনাজারা করে হাজার ও মৃত সুন্নাত জিন্দা করেন।


শিক্ষা দীক্ষা: তিনি সতের বছর বয়সে স্থানীয় মাদরাসা থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে দাখিল পাস করেন। তারপর ভারতে আলা হযরত এর সোবহানিয়া মাদরাসা থেকে সর্ব উচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন এবং প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান এর সুযোগ্য ছাত্র ছিলেন। তিনি মারেফাতের জ্ঞান লাভ ও বায়াতে রাসুল গ্রহণ করেন, শাহাজাদায়ে আলা হযরত আলে রহমান, মুফতীয়ে আজম হিঁন্দ মোস্তফা রেজা খাঁন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হাতে বায়াতে রাসুল গ্রহণ করেন। তিনি মুর্শিদের নিকট কঠোর রিয়াজত ও সাধনা করে অতি উচ্চ স্থানে আসীন হন। তখন উনার মুর্শিদ আল্লামা রেজভী সাহেবকে খেলাফত দান করেন। তিনি অনেক বছর ভারত বর্ষে ইসলাম প্রচার করেন। তারপর, মুর্শিদের হুকুমে বাংলাদেশে এসে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তখন সমসাময়িক বাংলাদেশে কয়েকজন সুন্নী আলেম ছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল, আল্লামা আবেদ শাহ আল মাদানী, আল্লামা সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা, আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ ছিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি।


হিজরত: আল্লামা রেজভী সাহেব হুজুর কেবলা তিনির জন্মস্থান থেকে হিজরত করে নেত্রকোণা জেলাধীন সতরশ্রী গ্রামে এসে বসতি স্থাপন ও ইসলাম প্রচার কেন্দ্র গড়ে তোলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তিনির খানাকা স্থাপন করে ইসলাম প্রচার কার্য শুরু করেন।

ইসলাম প্রচার: বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ইসলাম করেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য স্থান হল কুমিল্লা শহর। তিনি ইসলাম প্রচারের মূল কেন্দ্র হল কুমিল্লা খানকায়ে রেজভীয়া। এখান থেকে তিনি সবচেয়ে বেশি সময় ইসলাম প্রচার করেন। এই কুমিল্লা জেলায় তাঁর কয়েক লক্ষ ভক্ত আশেকান রয়েছে। এছাড়া ও তিনি চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, ব্রাম্মণবাড়িয়া, ঢাকা, সিলেট, হবিগঞ্জ, ময়মোহনসিংহ ও নেত্রকোণা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভক্ত আশেকান রয়েছে। দেশের বাহিরে ভারত বর্ষেও তাঁর হাজার হাজার ভক্ত আশেকান রয়েছে। তিনি ইসলাম প্রচার কালে বাতেল ফেরকা কর্তৃক ১২ বার আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন। সবচেয়ে আর্শ্চয জনক আঘাত প্রাপ্ত হন, কুমিল্লা জেলার তিতাস নদীতে, কয়েকজন জামাত শিবির কর্মী তিনিকে হাত পা বেঁধে তিতাস নদীতে ফেলে দেন। কয়েক ঘন্টা পরে তিনি নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলেন। তিনি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি এখানে কিভাবে আসলাম। ডাক্তার সাহেব বললেন, আপনাকে একজন পাগড়ীধারী এক আলেম ব্যক্তি এখানে এনেছেন। পরে তিনি খাজা খিজির কর্তৃক জানতে পারলেন যে, খাজা গরীবে নেওয়াজ, সুলতানুল হিন্দঁ খাজা মাইনউদ্দিন চিশতি উনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সর্বশেষ তিনি আঘাত প্রাপ্ত হন সিলেটে। একজন তাবলীগের আমীর তিনিকে গাড়ীতে উঠার সময় ছুরি দ্বারা আঘাত করেন। যখন তিনিকে হাসপাতালে নেওয়া হল, ডাক্তার সাহেব বলেন, উনি ২৪ ঘন্টার বেশি সময় বাচঁবেন না। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেল, শুধু ২৪ ঘন্টা নয় আজকে ১৪ বছর পার হয়ে গেল, আজ ও তিনি বেঁচে আছেন। পরে ডাক্তার সাহেব জানান, উনি এমন আধ্যাতিক ক্ষমতার দ্বারা বেঁচে আছেন, তা কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে কোন দিন সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ! আল্লামা রেজভী সাহেব হুজুর কেবলা তিনি নিজের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেন। এই রকম নজির খুবই কম দেখা যায়।

আল্লামা রেজভী সাহেব হুজুর কেবলার গ্রন্থাবলী পর্যালোচনা:
মোজাদ্দেদে জামান, ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী আকবর আলী রেজভী সুন্নী আল ক্বাদেরী মাদ্দা জিল্লুহুল আলী। তিনি প্রায় সাড়ে চারশত কিতাব রচনা করেন। এক একটি কিতাবের পরিধিও ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। তাফসীরে রেজভীয়া সুন্নীয়া ক্বাদেরীয়া এবং ঈমানভান্ডার বিশখন্ড তার উজ্জল প্রমাণ।
তাফসীরে রেজভীয়া সুন্নীয়া ক্বাদেরীয়া: কোরআন মাজিদের প্রামানিক অনুবাদ ও তাফসীর। তিনি প্রত্যেকটি আয়াতের পৃথক পৃথক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। যাতে যে কোন বিষয়ে সহজে জ্ঞান লাভ ও গবেষণা করা যায়। তিনি সহজ ও সাবলীল ভাষায় কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী তাফসীরে রেজভীয়া সুন্নীয়া ক্বাদেরীয়া রচনা করেন।
ঈমানভান্ডার বিশখন্ড: তিনির সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ হল ঈমানভান্ডার বিশখন্ড। এই গ্রন্থে তিনি হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম শান ও মান বিশেষভাবে উল্লেখ্য করেছেন। এই গ্রন্থের মত অতি মহামূল্যবান রচনাবলী খুবই কম পাওয়া যায়।
আদিল্লাতুচ্ছামা: ইসলামী গান বাজনা বা আধ্যাতিক ছেমার আয়োজন করা কত রহমত ও বরকতের কাজ তা এই গ্রন্থের মধ্যে বিবরণ রয়েছে। রাসুলে পাকের সময় থেকে আজ পর্যন্ত যত আউলিয়ায়ে কেরাম দুনিয়াতে আগমন করেছেন, সবাই ইসলামী গান বাজনা বা আধ্যাতিক ছেমার আয়োজন করেছেন। সবাই একে জায়েজ বলে ঘোষণা করেছেন। তার প্রমাণ এই গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে।
দিদারে নূরে খোদা: তিনির দিদারে নূরে খোদা উল্লেখ্যযোগ্য একটি আমলের কিতাব। এই কিতাবে কিভাবে রাসুলে পাকের দীদার লাভ করা যায় এবং ১৬টি নফল নামাজের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ রয়েছে।
নির্ভয় বাণী বা মারেফাত ভান্ডার: এই কিতাবে এলমে মারেফাত, এলমে হাকিকত, পীর মুরিদি, অলী গণের শান ও মান আজমত বিশতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আউলিয়াগণের জন্য কি বিশেষ অফার সমূহ রেখেছেন, তা এই কিতাবে রয়েছে।
আদাবুল আযান: আযান একটি গুরুপ্তপূর্ণ ইবাদত। বর্তমানে আযান নিয়ে ফেতনা ফাসাদ দেখা দিয়েছে। এই আযান সর্ম্পকে সকল ফেতনা ফাসাদকে উপেক্ষা করে একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব রচনা করেন।
কালিমায়ে ঈমান ও কুফর: কোন কোন কথা বার্তার দ্বারা কুফুরী হয়, ঈমান বরবাদ হয়ে যায়, এই সকল বিষয়ে সকল ঈমানদার মুসলমান জানা একান্ত কর্তব্য। এই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব রচনা করেন।
জাহেরী ও বাতেনী ঈমানের পরিচয়: ঈমান কি? ঈমান কাকে বলে? ঈমানের জাহেরী ও বাতেনী পরিচয় দিয়েছেন উক্ত কিতাবে। উক্ত কিতাবটি ঈমানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি কিতাব।
বাহাছ ও মোনাজারা: বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাতেল ফেরকাদের সাথে বাহাছ ও মোনাজারা হয়েছে। সকল বাহাছেই তিনি জয়ী হয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্য যোগ্য হল ”বদরপুরের বাহাস” এবং নেত্রকোণার শহরের বাহাস। ১৯৭৭ সালে এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে বদরপুর বাজার মাদ্রাসার প্রাঙ্গণে তাবলীগ জামাতের সাথে মোনাজারা হয়। উক্ত মোনাজারায় তাবলীগ জামাত শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয় এবং উশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, পরে স্থানীয় লোকেরা তাদেরকে হালকা উত্তম মধ্যম দেয়। উক্ত বাহাছের সভাপতি ছিলেন তখনকার চেয়ারম্যান মো: মনিরুল হক ৯নং মাইজখার ইউনিয়ন পরিষদ। ১৯৯৭ সালে নেত্রকোণা সদরে জেলা অফিসে মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরীর সাথে বাহাছ হয়। উক্ত বাহাছে নুরুল ইসলাম ওলীপুরী ও শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। এছাড়াও ব্রিটিশ আমলে রংপুরে খ্রিস্টান পাদ্রীর সাথে বাহাছ হয়। উক্ত বাহাছে খ্রিস্টান পাদ্রী ও শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয় এবং সে বাংলাদেশ ছেড়ে একবারে চলে যায়। কাদিয়ানিদের সাথে ও বাহাছ হয় এবং সৌদি আরবে একবার বাহাছ হয়, তিনি ঐ বাহাছে ও জয়ী লাভ করেন। সৌদির সরকার উপহার স্বরুপ একটি গাড়ি দিয়েছেন।
মহিউসুন্নাহ: মৃত সুন্নাত জিন্দাকারী। আল্লামা রেজভী সাহেব হুজুর কেবলা অসংখ্য মৃত সুন্নাত জিন্দা করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হল, মসজিদে জুমার দিন দ্বিতীয় আযান দরজায় দিতে হবে, কাঠের তৈরী মিম্বার, কালো রংঙের পাগড়ির ব্যবহার, কালো টুপির ব্যবহার, কবরের পাড়ে আযান, বিবাহ শাদীতে ইসলামী গান বাজনা ও প্রচার করা, আধ্যাত্মিক ছেমা, একাধিক মুয়াজ্জিনে আযান প্রদান করা, মসজিদের ভিতরে বিবাহ কার্য সমাধান ইত্যাদি। সর্বোপরি, এই বাংলার জমিনে তাজা রক্তের বিনিময়ে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম উদযাপন করেছেন।

(চলবে..........................................)

সংকলনে
ডাঃ রেজভী শরীফুল ইসলাম
(বিএসএস, ডিএইচএমএস)

Post a Comment

 
Top