16

মিলাদের ব্যবহারিক-অভিধানিক অর্থ জানা প্রয়োজন। অভিধানে মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মের সময় কাল এবং ব্যবহারিক অর্থ হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের জন্মের খুশিতে তাঁর মুযেজা, বৈশিষ্ট্য, জীবনী প্রভৃতি বায়াণ করা। অগণিত হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা যায়, রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-গণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মীলাদ বা জন্ম বৃত্তান্তের আলোচনা করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে স্বীয় মীলাদ বা জন্ম দিবস পালন করেছেন। নিম্নে কিছু নমুনা উপস্থিত করলাম।
১. عَنْ اَبِى قَتَدَةَ الاَنْصاَرِى رَضِى الله عَنهُ اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سءل عَنْ صَوْمِ يَوْم الاِ ثْنَيْنِ قَلَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ بُعِثْتُ اَوْاُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ-
অর্থাৎ হযরত আবু কাতাদা (রা:) হতে বর্নিত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লামার দরবারে আরজ করা হলো তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরে নবীজি ইরশাদ করেন, এই দিনে আমি জন্ম গ্রহন করেছি, এই দিনেই আমি প্রেরিত হয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয়।
[সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃঃ, মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ:, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ:, হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:]
এ ছাড়াও অন্য হাদিস হতে প্রমাণিত স্বয়ং হুযুর নিজের জন্মের খুশির উদ্দেশ্যে ছাগল যবাহ করেছিলেন।
ওহাবী-খারেজী সম্প্রদায়ের নেতারা বলে থাকে এই হাদীসগুলোকে নাকি আমরা মিলাদুন্নাবী (দঃ) এর পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে আমরা নই, বরং আগেরকার যুগের খ্যতিমান আলেমগণ মিলাদের পক্ষে দলীল হিসেবে প্রয়োগ করেছিলেন।
[দেখুনঃ ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম সুয়ুতী (রঃ) আল হাবিলুল ফাতোয়া ১ম খন্ড ১৯৬ পৃঃ, মিলাদুন্নাবী (দঃ) এর পক্ষে উনার রচিত স্বীয় কিতাব হুস্নুল মাকাসিদ ফি আমালিল মোলিদ ৬৫ পৃঃ, ইমাম নাব হানী (রঃ) হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন ২৩৭ পৃঃ ইত্যাদি গ্রন্থসমূহ]
তাহলে বোঝা গেল মিলাদ শরীফ পালন করা হুযুরের সুন্নাত।
২. প্রশিদ্ধ হাদিসে বণির্ত হযরত উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বণর্না করেছেন যে, রসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম এবং আবুবকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার নিকট নিজ নিজ মিলাদ শরীফের বণর্না করেছেন (ইমাম বায়হাকী এই বণর্না কে হাসান বলেছেন)।
[দেখুনঃ আল যামুল কাবীর লিত তাবরাণী ১ম খন্ড ৫৮ পৃঃ, মযমাঊল যাওয়াঈদ ৯ম খন্ড ৬৩ পৃঃ]
৩. হুযুর পাক নিজের মিলাদ বণর্না করে বলেন অবশ্য ই আমি আল্লাহর নিকট খাতিমুল নব্বীইন নিব্বাচিত হয়েছি ওই সময় যে সময় হযরত আদাম মাটি ও পানীতে মিশ্রিত অবস্থায় ছিল। আমি তোমাদের কে আবার প্রাথমিক অবস্থার খবর দিচ্ছি-আমি হচ্ছি হযরত আদাম আলায়হিস সালামের দুয়া ও হযরত ঈসা আলায়হে সাল্লামের খুশির বার্তা এবং আমার মাতার স্বপ্ন যা তিনি আমার জন্মের সময় দেখেছিলেন যে উনার মধ্য হতে একটি নুর নিগর্ত হয়েছে যার দ্বারা শাম দেশের বহু মহল রওশন হয়ে গেছে ।
[মিশকাতুল মাসাবিহ ৫১৩ পৃঃ, তারিখে মাদিনা ও দামাশক – ইবনে আশাকিড় ১ম খণ্ড ১৬৮ পৃঃ, কানযুল উম্মাল ১১খন্ড১৭৩ পৃঃ, মুসনাদে ইমাম আহমদ ৪ খন্ড ১৬১ পৃ, আল মুজমাল ক্বাদির ১৮ খন্ড ২৫৩ পৃঃ, মুসনাদ আফযার হাদিস নং ২৩৬৫, তাফসির দুররে মান্সুর ১ম খন্ড ৩৩৪ পৃঃ, মাওয়ারেদুল জাম্মান ১ খন্ড ৫১২ পৃঃ, সহী ইবনে হাব্বান ৯ম খন্ড ১০৬ পৃঃ, আল মুস্তাদ্রাক লিল হাকিম ৩য় খণ্ড ২৭ পৃঃ , আল বেদায়া অয়ান নেহায়া ২য় খণ্ড ৩২১ পৃঃ, মাযমাউল যাওয়ায়েদ ৮ম খন্ড ৪০৯ পৃ প্রভৃতি]
৪. হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আসলেন। কারণ তিনি যেন হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশ বুনিয়াদ সম্পর্কে বিরুপ কিছু মন্তব্য শুনেছেন। [তা হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে অবহিত করেন] তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বর শরীফ এর উপর আরোহণ করেন। (বরকতময় ভাষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে)। অতঃপর তিনি সাহাবা কেরামগণের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি কে?” উত্তরে তারা বলেন, “আপনি আল্লাহর রাসুল”। তখন হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, “আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র মুহাম্মদ (দরুদ)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মানব-দানব সবই সৃষ্টি করেন। এতে আমাকে উত্তম পক্ষের(অর্থাৎ মানবজাতি) মধ্যে সৃষ্টিক করেন। অতঃপর তাদের (মানবজাতি)-কে দু’সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেন (অর্থাৎ আরবীয় ও অনারবীয়) এতেও আমাকে উত্তম সম্প্রদায়ে (আরবী) সৃষ্টি করেন। অতঃপর আরব জাতিকে অনেক গোত্রে বিভক্ত করেন। আর আমাকে গোত্রের দিক দিয়ে উত্তম গোত্রে (কোরাইশ) সৃষ্টি করেন। তারপর তাদেরকে (কোরাইশ) বিভিন্ন উপগোত্রে ভাগ করেন। আর আমাকে উপগোত্রের দিক দিয়ে উত্তম উপগোত্রে (বনী হাশেম) সৃষ্টি করেন। সুতরাং আমি তাদের মধ্যে সত্তাগত, বংশগত ও গোত্রগত দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ। [তিরমিযী, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা নং-২০১; মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং-৫১৩]
[অন্য সূত্রে বর্ণীত এই সম্পর্কিত আরও হাদীসের জন্য দেখুন জামে তীরমিযী ২য় খন্ড ২০১ পৃঃ, মুসনাদে ইমাম আহমদ ১ম খন্ড ৯ পৃঃ, দালায়েলুল নবুওত বায়হাকী ১ম খন্ড ১৬৯ পৃ, কানযুল উম্মাল ২য় খন্ড ১৭৫ পৃঃ]
৫. হযরত যাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন- আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে লক্ষ্য করে বললাম- হে আল্লাহর রাসুল(দরুদ)! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কোরবান হোক। আমাকে কি আপনি অবহিত করবেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন বস্তু সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে রাসুল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- হে জাবির! সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তোমার নবীর নূরকে তার আপন নূর হতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় ঐ নূর কুদরতে যেথায় সেথায় ভ্রমণ করতেছিল। ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেশত-দোজখ, ফেরেশতা, আসমান-জমীন, চন্দ্র-সূর্য, জিন-ইনসান কিছুই ছিল না।
[মাওয়াহেবুল লাদুন্নিইয়া, শরহে জুরকানি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৮৯]
উপরের হাদীসসমূহই হল হুজুর পাক (সাঃ) এর জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কিত হাদীস। আর এই হাদীসের বিষয়বস্তুই মূলত মিলাদে আলোচনা করা হয়। আমরা এসব আলোচনা করলেই ওহাবী-খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের ‘ভন্ড’, ‘বিদ’আতি’ ইত্যাদি খেতাবে ভূষিত করেন। আমাদের খুব জানতে ইচ্ছা হয় স্বয়ং মহানবী (সাঃ) এবং সাহাবীগণ (রাঃ) যখন জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করতেন তখন এই সম্প্রদায়ের নেতারা কি ফতওয়া দিবেন?

Post a Comment

  1. সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) উদযাপন করেছেন তার দলিল কই?
    ঈদ বলেছেন তার দলিল কই?
    حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ ‏"‏‏.‏ رَوَاهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ الْمَخْرَمِيُّ وَعَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ أَبِي عَوْنٍ عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ‏.‏

    ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত,

    তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কেউ আমাদের এ শরী‘আতে নাই এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যাত।
    সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬৯৭
    হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
    আল্লাহ হেদায়েত দিন, আমিন

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহা। গাঁধা কারে কয়! এতগুলো দলিল দেওয়ার পরও তার প্রশ্ন কি? জনাব, রাসূল (দঃ) দুনিয়াতে আসছে এটা কি আপনার জন্য খুশির না?

      Delete
    2. This comment has been removed by the author.

      Delete
    3. ৯ শতাব্দীর মুনাফেকদের লেখা ফুরফুরা কিতাব ছাড়া আর কিইবা দলিল দিতে পারবি?

      Delete
    4. কি সব হাদিসের দলিল দেখাচ্ছে শুধু দেখেন আপনারা। নবিজী জম্মদিনে রোযা রাখতেন। এটা আমাদের জন্যেও সুন্নত। কোন হাদিসে আছে যে "আল্লাহুমা সল্লিআলা......" এই দুরুদ পড়ার কথা?? আমাদের সমাজে এখন যে পদ্ধতিতে মিলাদ পড়া হয় তার প্রমাণ তো দিতে পারলেন না। দিলেন নবিজীর রোযা রাখার হাদিস যা আমরা সবাই জানি। রোযা রাখার হাদিস আপনারা মিলাদ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন 😂😂🤣

      আর একটা হাদিসেও সুনিদিষ্ট মিলাদের কোন কথাই বলা হয় নি।

      Delete
  2. সুন্দরদলিল হয়েছে।যারা বলে এটা পালন করা বেদাত,আমি বলি তারা কুরআন মানে না,হাদীস মানে না,,,,,,

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনারা তাহলে প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন সুন্নত হিসেবে
      কিন্তু আপনারা উলটো কি করছেন ___ইদে-মিলাদুন নাবী পালন করছেন _ যার কোনো ভিত্তি নাই এটি আপনাদের দলিল দ্বারাই প্রমাণিত

      Delete
  3. আপনি সম্পূর্ন মিথ্যা বানোয়াট মনগড়া কথা বলতেছেন।হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কোনদিন নিজের জন্মদিনতো পালন করেন ই নাই অন্যকোন নবীদের জন্মদিন ও পালন করেন নাই। এসব বিদ'আতি কথাবার্তা বাদ দিয়ে আখিরাতের কথা ভাবুন।

    ReplyDelete
  4. সহিহ হাদিস বইয়ের দলিল নাই

    ReplyDelete
  5. বিদআতিদের জ্বলে এসব কথায়। আসল মুনাফিক তো এরাই।

    ReplyDelete
  6. আমি একটা জিনিস বুঝলাম না,,,যে এত বড় কলাম লিখছে,,সে কি বুঝে লেখছে না কথ তে কপি করে পোস্ট মেরে দিছে,,,আচ্ছা ভাই আপনি যে দলীলগুলো দিলেন কোন দলিলটাতে আছে যে সাহাবারা 12ই রবিউল আওয়ালে বিলাদতের আলোচনা করেছেন,,কোনটাতে আছে যে তারা শুধু বিলাদতের আলোচনার জন্য 12 রবিউল আওয়াল কে বেছে নিয়েছেন,,আর বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ব্লাদত পালন করা হয় তা সাহাবাদের দেখানো পদ্ধতির সাথে মিলে????

    ReplyDelete
  7. ঈদে মিলাদুন্নবী সফল হৌক আমীন।

    ReplyDelete
  8. মিলাদ এতবর ফজিলত যদি হয় তাহলে মক্কা মদিনায় করা হয়না কেন।

    ReplyDelete
  9. لا يتطلب الأمر الكثير من المرح للقيام ببدات

    ReplyDelete

 
Top