0



নবী এবং ওলী-গণের নিকট সাহায্য চাওয়া জায়েযঃ

আমরা দৈনন্দিন জীবনের প্রতি মুহূর্তে অন্যের অর্থাৎগায়রুল্লাহ-র সাহায্য প্রার্থী হয়ে থাকি যেমন - সন্তান পিতা-মাতার নিকটপ্রজা বাদশাহ বা সরকারের নিকটমাদ্রাসা  মসজিদের চাঁদার জন্য জনসাধারনের নিকট সাহায্য প্রার্থীহইএটা শিরক্ নয় এরা সবাই গায়রুল্লাহ্ হযরত ঈসা (আঃযিনি নবী ছিলেনতিনিও তাঁর অনুগত হাওয়ারীগণ(গায়রুল্লাহ্এর কাছে সাহায্য চেয়েছেনঃ
অর্থাৎ, “মরিয়ম তনয় ঈসা (আঃহাওয়ারীগণকে বললেনআল্লাহর রাস্তায় কারা আমার সাহায্যকারীহাওয়ারীগণবললেনআমরা আল্লাহর রাস্তায় আপনার সাহায্যকারী” (সূরা - আলে-ইমরান : আয়াত - ৫২) একজন নবীর পক্ষেকী তাহলে শিরক্ করা সম্ভব? (নাউযুবিল্লাহ্)
বস্তুত তার কাছেই চাওয়া যায় যিনি দেয়ার বা দান করার ক্ষমতা রাখেন ক্ষমতা দুই প্রকার - ‘জাতিগত বা স্বত্ত্বাগতযা একমাত্র আল্লাহ্পাকের জন্য খাস এবং ‘আতাই বা আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত’ - যা আল্লাহ্ পাক তাঁর সকল বান্দাকেপ্রদান করে থাকেন এটা আবার দুপ্রকার - ‘সাধারণ ক্ষমতা’ - যা সকল বান্দাকে আল্লাহ্পাক কমবেশী দিয়ে থাকেন,এবং বিশেষ ক্ষমতা (রুহানী) - যা আল্লাহ্পাক তাঁর খাস বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দিয়ে থাকেন যেমন - ‘নবী’ ওলীআল্লাহ্গণ এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ, “তিনি (আল্লাহ্নিজ অনুগ্রহ প্রদানের জন্য যাকে ইচ্ছা বেছে নেন” (সূরা - আল্-বাক্বারাহ : আয়াত -১০৫)
আরো এরশাদ হচ্ছেঃ
 অর্থাৎ, “আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা স্বীয় ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব বা প্রভুত্ব দান করে থাকেন আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়  প্রজ্ঞাময়” (বলতে প্রভুত্বকর্তৃত্ব  মালিকানা ইত্যাদি বুঝায়) (সূরা - আল্-বাক্বারাহ : আয়াত - ২৪৭)
হযরত ঈসা (আঃআল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে জন্মান্ধ  কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য এবং মুর্দাকে জিন্দা করতেন এরশাদহচ্ছেঃ
 অর্থাৎ, “আমি (ঈসাজন্মান্ধ  কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য করি এবং মুর্দাকে জিন্দা করি
আল্লাহর ইচ্ছায়” (সূরা - আলে-ইমরান : আয়াত - ৪৯)
হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- আল্লাহ্ প্রদত্ত এহেন ঐশ্বরিক বা রুহানী শক্তিবলে যাকে ইচ্ছাএবং যা ইচ্ছা দান করেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন অর্থাৎদান করার ক্ষমতা রাখেন এরশাদ হচ্ছেঃ
 অর্থাৎ, “ইহা কতই না ভালো হতো যদি তারা আল্লাহ্  তাঁর রাসূল তাদেরকে যা দান করেছেনতাতে সন্তুষ্টথাকতো এবং বলত - আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে আমাদের দান করবেন এবং তাঁর রাসূলও আমরা আল্লাহর প্রতিআসক্ত” (সূরা - আত্-তাওবাহ : আয়াত - ৫৯)
আরো এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ, “আল্লাহ্  তাঁর রাসূল নিজ অনুগ্রহে তাদের (মোমিনকে ধনশালী করেছেনএটাইতো তাদেরকে(কাফেরদেরব্যথিত করেছে” (সূরা - আত্-তাওবাহ : আয়াত - ৭৪)
হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামখোদা প্রদত্ত এহেন ঐশ্বরিক বা রুহানী ক্ষমতা বলে অঙ্গুলিরইশারায় চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করেছেনঅস্তগামী সূর্যকে পুনঃউদিত করেছেন এবং হযরত জাবের (রাঃ)’ মৃত পুত্রদ্বয়কেপুনঃজীবিত করেছেন
আল্লাহ্পাক তাঁর খাস বান্দা ওলীগণকেও বিশেষ (রুহানীক্ষমতা প্রদান করে থাকেন পবিত্র কোরআনে মজিদে ‘সূরানমলের’ তৃতীয় রুকুতে বর্ণিত হযরত সোলায়মান (আঃ রাণী বিলকিস-এর ঘটনা তারই প্রমাণ হযরতসোলায়মান (আঃ)’ মন্ত্রী ‘আছফ বরখিয়া’ যিনি চোখের এক পলকে কয়েক সহস্র মাইল দূরে অবস্থিত ইয়ামেনেররাজধানী ‘সাবা’ হতে রাণী বিলকিসের বিরাট সিংহাসন কে ‘জেরুজালেমে’ হযরত সোলায়মান (আঃ)’ দরবারেউপস্থিত করেছিলেনতিনি নবী ছিলেন নাবনী ইসরাইলের একজন ওলী আল্লাহ্ ছিলেন হযরত নবী করিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’ উছিলায় তাঁর উম্মতের মধ্যে বহু ওলীআল্লাহ্ আবির্ভূত হয়েছেন এবং হবেন,যাদের মর্তবা বনী ইসরাইলের ওলীআল্লাহ্দের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে
গাউসুল আজম পীরানে পীর দস্তেগীর হযরত সাইয়েদেনা শেখ আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ), খাজায়ে কুল্লে খাজেগাঁহযরত খাজা গরীব নওয়াজ মঈনুদ্দীন চিশতী সাঞ্জারী আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী (রাঃ), খাজায়ে খাজেগাঁ হযরতখাজা শেখ বাহাউদ্দীন নকশ্বন্দ বুখারী (রাঃ), খাজায়ে খাজেগাঁ হযরত খাজা শেখ আহামদ সেরহান্দ মুজাদ্দেদ আল-ফেসানী (রাঃএবং খাজায়ে খাজেগাঁ হযরত খাজা শেখ শাহাবুদ্দিন সাহারওয়ার্দী (রাঃপ্রমুখের নাম তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য
এই সকল ওলীআল্লাহ্গণ স্বীয় রূহানী ফয়েজ বা আধ্যাত্মিক শক্তি বলে অগণিত বিপদগ্রস্থ মানুষের কল্যাণ সাধন করেথাকেন বিধায় মানুষ বিপদ-আপদে স্বীয় মকসুদ হাসেলের নিমিত্ত উছিলা স্বরুপ তাঁদের স্মরণাপন্ন হয়  তাঁদেরসাহায্য কামনা করে
এখন যদি বলা হয় আল্লাহ্পাকতো এরশাদ করেছেনঃ
অর্থাৎ, “আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুকে ডেকোনা যারা তোমাদের লাভ বা ক্ষতি কিছুই করতে পারে না (সূরা - ইউনূসআয়াত - ১০৬)
আরো এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ, “এবং এরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুকে ডাকে যা তাদের উপকারও করে না অপকারও করে না (সূরা -আল্-ফোরক্বান : আয়াত - ৫৫) সুতরাং আল্লাহ্ ভিন্ন কাউকে ডাকা এবং তার নিকট সাহায্য চাওয়া শিরক্ বা কুফরীনয় কিউত্তরে বলতে হয় উপরোক্ত আয়াত সমূহে "লা-আ"-শব্দটি মূলতঃ পূজা করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে(তফসীরে জালালাইন), অর্থাৎ আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারো পূজা করো না উপরন্তু উক্ত আয়াত কাফেরদের মুর্তী বাদেব-দেবীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে মূর্তী মাটি বা পাথরের দ্বারা মানুষের সৃষ্টি এবং নির্জীব বা প্রাণহীন আরমানুষ আল্লাহর সৃষ্টিআল্লাহর বান্দা (আশরাফুল মাখলুকাতসজীবকর্মক্ষমবিবেক  বুদ্ধি সম্পন্ন
হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’ উছিলায় তাঁর উম্মতগণের অন্তর্ভূক্ত ওলীআল্লাহ্গণআল্লাহ্পাকের বিশেষ রহমত  নেয়ামত প্রাপ্ত বান্দারুহানী শক্তির অধিকারী এবং আছরারে এলাহীর বিকাশ স্থলযাঁদের হাস্তির মধ্যে জাত--এলাহীর হাস্তি সর্বদা বিরাজমান
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃহতে বুখারী শরীফে বর্ণিত হাদীছে কুদসী - তে রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামফরমানঃ
অর্থাৎ, “অবশ্যই আল্লাহ্ বলেন আমার যে বান্দা সর্বদা নাওয়াফেলের (রুহানী সাধনাদ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করেথাকেএমনকি আমি তাকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে থাকি আমি যখন তাকে স্বীয় বন্ধুরূপে (ওলীগ্রহণ করে নেই তখনআমি তার কর্ণ হয়ে যাই যা দ্বারা সে শুনেআমি তার চক্ষু হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখেআমি তার হাত হয়ে যাই যাদ্বারা সে ধরেআমি তার পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলে এবং সে আমার নিকট যা চায় তা আমি নিশ্চয়ই তাকে দিয়েথাকিআমি তার হৃদয় (কলব্হয়ে যাই যা হতে সে জ্ঞান লাভ করে এবং আমি তার জিহ্বা হয়ে যাই যা দ্বারা সেকথা বলে” (সহীহ বুখারী : কিতাবুর রিক্বাক / সহীহ ইবনে মাজাহ - ২য় খন্ড২১৯ পৃষ্ঠা) 
অর্থাৎতাঁদের কর্ণ আল্লাহর ‘সামীউন’-এর শ্রবনশক্তিরতাঁদের চক্ষু আল্লাহর ‘বাছীরুন’-এর দৃষ্টিশক্তিরতাঁদের হাতইয়াদুল্লাহের’ এবং তাঁদের পা ‘রেযলুল্লাহের’ বা আল্লাহর পদশক্তির বিকাশ স্থলে পরিণত হয় তাই উল্লেখিতপ্রমাণাদির নিরীখে আল্লাহ্পাকের এহেন বান্দাদের নিকট সাহায্য চাওয়া কুফুরী বা শিরক্ হতে পারে না কারণ তাদেরকাছে চাওয়াপ্রকৃত অর্থে আল্লাহরই কাছে চাওয়া
যেহেতু আল্লাহ্পাকের এহেন খাস বান্দাগণ অমর অবিনশ্বর এবং জাহেরী মৃত্যুর মাধ্যমে জড়দেহ হতে আত্মিক মুক্তিলাভের পর তাঁরা বিশ্বভূবনের সর্বত্র স্বাধীন ভাবে বিচরণ করতে এবং চাক্ষুষ সব দেখতে  শুনতে সক্ষম । এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ, “যখন পবিত্র আত্মা শারীরিক বন্ধন হতে মুক্ত হনতখন তাঁরা উর্দ্ধজগতের ফেরেশ্তাদের সাথে মিশে যান এবংস্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী আসমান  যমীনের সর্বত্র বিচরণ করেন এবং জীবিত ব্যক্তিদের ন্যায় চাক্ষুষ সবকিছু দেখতে পান শুনতে পান” (মোল্লা আলী কারীর মীরকাত : ২য় খন্ড -  পৃষ্ঠা / আল্লামা মানভীর তায়ছির)
যেহেতু জাহেরী মৃত্যু বা বেছালে হক প্রাপ্তির পরেও তাঁদের রুহানী ক্ষমতা বিদ্যমান থাকেজাহেরী মৃত্যু তাঁদেররুহানী শক্তির উপর কোন প্রকার প্রভাব বিস্তার বা বিঘ্নতা সৃষ্টি করতে পারে না এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎজাহেরী মৃত্যু কেরামতে আউলিয়ার মধ্যে কোন প্রকার বিঘ্নতা সৃষ্টি করতে পারে না অতএবআউলিয়াগণজাহেরী মৃত্যুর পরেও স্বীয় কেরামত প্রকাশ করে থাকেন (কাশফেন্ নূর)
এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ, “নিশ্চয়ই আম্বিয়া  আউলিয়াগণের জীবন হাকীকতের মধ্যে (প্রকৃতপক্ষেঅবিনশ্বর এবং তাঁদের অমরজীবনকে জাহেরী মৃত্যু বিনষ্ট করতে পারে না কেননাজাহেরী মৃত্যু রুহের বিচ্ছিন্নতা দ্বারা শরীরের উপর সংঘটিতহয়ে থাকে তাঁদের দেহ মাটি ভক্ষণ করে নাতাঁরা সশরীরে জীবিতদের ন্যায়তাই তাঁরা ইন্তেকালের বা জাহেরীমৃত্যুর পরেও মানুষকে সাহায্য করতে সক্ষম তাঁদের কবরশরীফ হতে সদা সর্বদা ফয়েজ জারী থাকে” (তাফসীরেরুহুল বায়ান, ‘সূরা - আদ্ দোখান’, ২য় খন্ড৩২৩ পৃষ্ঠা / তাফসীরে হাক্বক্বী - ১৩তম খন্ড২৮১ পৃষ্ঠা) 


Post a Comment

 
Top