0

হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্ণিত , এক ব্যাক্তি আবেদন করলেন , ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)! কেয়ামত কখন হবে ? উত্তরে আল্লাহর রাসুল জিজ্ঞেস করলেন । ক্বিয়ামতের জন্য তুমি কি প্রস্তুতি নিয়েছ ? লোকটি আরয করলো , তজ্জন্য আমি তেমন কোন প্রস্তুতি নিতে পারিনি ; তবে আমি আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসুল কে ভালবাসি। এবার হুজুর এরশাদ করলেন , তুমি যাকে ভালবাস কিয়ামত দিবসে তুমি তার সাথেই থাকবে ।(এ হাদিসের বর্ণনাকারী ) হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন , “ইসলামের আবির্ভাবের পরে আমি মুসলমানদেরকে এরূপ আর খুশি হতে দেখিনি, যে রুপ এ কথাটুকু শুনে খুশি হয়েছেন ।” ( সুত্র বুখারী ২য় খন্ড ৯১১ পৃষ্ঠা , মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ৩৩১ পৃষ্ঠা , মিশকাত শরীফ ৪২৬ পৃষ্ঠা ।) প্রসঙ্গিক আলোচনাঃ- নবীপ্রেমই খোদাপ্রাপ্তির পুর্বশর্ত । কারন আল্লাহ পাক স্বয়ং কোরআনে ইঙ্গিত দিয়েছেন , আমাকে কেউ ভালবাসতে চাইলে কিংবা আমার আমার ভালবাসা পেতে চাইলে , সে যেন আমার হাবীবের আনুগত্য করে , এক কথায় আমার নবীর গোলামী করে (অর্থাৎ,আল্লাহর বন্দেগী করা,এবং নবীর গোলামী করা)।

আর আল্লাহর হাবীব এরশাদ করেছেন , ” ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কেউ পরিপূর্ন ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষন পর্যন্ত আমি তার কাছে বেশি প্রিয় হব তার মাতাপিতা , সন্তান-সন্ততি, মানুষ ও সবকিছুর চেয়ে । ( বুখরী শরীফ ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা )

পবিত্র কোরআন-হাদিসে’র সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনায় ও প্রতিয়মান হয় । পৃথিবীতে কোন ব্যাক্তি যত বড় নামাজি, রোজাদার , দানবীর , তথা ইবাদতকারী হোকনা কেন যদি তার অন্তরে নবীর প্রেম-ভালবাসা স্থান না পায় , তাহলে তার ঐ সব ইবাদত , নামাজ রোজার মূল্য নেই । কারন ঈমানদার হওয়ার জন্য নবীর মুহাব্বত প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব তথা আবশ্যক । আর নামাযের ভিতরেও আল্লাহর নবীর উপর দরুদ পড়া ও আল্লাহর হাবীব কে সালাম দেওয়া ওয়াজিব । (যেমনকিনা নামাযে “আত্তাহিয়্যাতুর” পড়ার সময়,আস্‌সালামু আলাইকা ইয়া আয়্যুহান্নাবি)আর সালাম প্রদানের সময় নবীজীর স্বরণ অন্তরে একাগ্রতার সাথে রাখা বাঞ্চনীয় । আনমনা তথা অন্যমনস্ক হয়ে নামাজ পড়া হলে তা পরিপুর্ণ নামায নয় বলে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে ।

আর মহান রাব্বুল আলামীন হুশিয়ারবানী উচ্চারণ করেছেন - (فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ * الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلاتِهِمْ سَاهُونَ)  ‘ফাওয়াইলুল্লিল মুসাল্লি-না ল্লাযী ‘ আন সালা -তিহিম সা-হু-ন ” ( ঐ সব নমাযীদের জন্য রয়েছে ধ্বংস , যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে অন্যমনস্ক থাকে ) তাই উদ্ধৃত কোরআন-হাদিসের বানীদ্বয় আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে নামাযেও রাসুলকে স্মরণ করা একান্ত আবশ্যক । নবী কে ভালবাসা কেমন হওয়া চাই , তার প্রমান দিয়েছেন , আমীরুল মু’মিনিন সিদ্দিক্ব-ই- আকবর হযরত আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ।) হিজরতের রাত ‘সওর’ পর্বতে গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ছোট ছোট সকল গর্ত বন্ধ করে সর্বশেষ গর্তটি বন্ধ করার কিছু না পেয়ে নিজের পা দিয়ে গর্তের মুখ ঢেকে রেখেছিলেন । যাতে বিষাক্ত কিছু গর্ত দিয়ে এসে আল্লাহর রাসুলের আরামের ব্যাঘাত করতে না পারে । সর্ব শেষ ঐ গর্তেই বিষাক্ত সাপ এসে ছোবল মারলে সিদ্দিক-ই আকবরের সমস্ত শরীর নীল হয়ে এক পর্যায়ে শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। নিজের প্রান চলে যাবার উপক্রম হয়েছিল এমন মুহুর্তে সিদ্দিক্ব-ই -আকবর নবীজীর ঘুম ভেঙ্গে যাবে , কষ্ট হবে এমন ভেবে একটু শব্দ ও করেন নি । এক কথায় প্রানের চেয়ে বেশী নবী-ই-পাকের আরামকে প্রধান্য দিয়েছেন । এত গেল কেবল একটা দৃষ্টান্ত । এরকম হাজারো দৃষ্টান্ত হযরত সিদ্দিক-ই-আকবর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন তাইতো একদা আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার) প্রশ্নের উত্তরে হুজুর করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) বলেছিলেন – আকাশের নক্ষত্রের সংখ্যার চেয়েও বেশি আমল করেছেন ফারূক্ব-ই -আযম হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ।) আর ওমরের এ ইবাদতের চেয়েও তোমার পিতা আবু বকর এক রাতের ইবাদত শ্রেষ্ট । ( মিসকাত শরীফ : কিতাবুল মানাক্বিব) দেখুন ! আমীরুল মো’মিনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র) সারা জীবনের ইবাদতে বিভিন্ন প্রকার আমল ছিল। যেমন : নামায ,রোযা , হজ্,যাকাত, যিকির-আযকার। তাসবীহ-তাহলীল , জিহাদ,ন্যায় বিচার আরো কত ইবাদত । এসব আমলের সমষ্টির চেয়েও সিদ্দিক্ব-ই-আকবরের মাত্র এক রাতের আমল তার চেয়েও বেশি ভারী।

মুহাদ্দোসীনে কেরামের মতে এখানে যে রাতের কথা বলা হয়েছে, সেটি হল হিজরতের রাত। যে রাতে তিনি নিবেদিত প্রাণ হয়ে আল্লাহর রাসুলকে সঙ্গ দিয়েছিলেন । প্রশ্ন হল – এমন কি আমল করেছিলেন তিনি সে রাতে ? কিংবা কত হাজার রাকাত নামায পড়েছিলেন ; আর কি বা দান -সাদাক্বাহ করেছিলেন ? না , তিনি এমন কিছুই করেন নি , তিনি শুধু নিজের প্রানের চেয়ে আনেক বেশি ভালবেসেছিলেন আল্লাহর প্রিয় রাসুল কে । আর নবীর প্রতি এক রাতের অকৃত্রিম ভালবাসা মহান আল্লাহর কাছে ফারুক্ব-ই-আযম হযরত ওমর ফারুক (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর’র) মত মহান সত্ত্বার সারা জীবনের অসংখ্য ইবাদত-আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় ও মুল্যবান হয়ে গেল ।

তাই বুঝা যায় , নবীপ্রেমই ইবাদতের মুল । স্মর্তব্য , কেবল নবীর মুহাব্বত দাবি করে আমল ছেড়ে দিলাম, তা মোটেও হতে পারে না । আশিক্ব-ই -রাসুল নাম দিয়ে নামায ,রোঝা , ইত্যাদি ইবাদত বান্দেগী করতে হবে না এমন ফতোয়া আজ পর্যন্ত কেউ করে দেন নি । সুতরং আমল ছাড়া নবীপ্রেম দাবি করা প্রতারণার নামান্তর । তাই ঈমানের দাবি নিয়ে আল্লাহর রাসূলকে প্রকৃতভাবে বেশি ভালবাসতে হবে এবং আল্লাহর হাবীবের প্রতিটি সুন্নাতকে প্রানের চেয়ে বেশি ভালবাসে আঁকড়ে ধরতে হবে -অনুসরণ করতে হবে , তবেই হবে প্রকৃত মু’মিন -মুসলমান ।

নবীপ্রেম আছে তো ইমান আছে , সাথে আমলও এসব মিলেই হবে সোনায় সোহাগা । এ পার্থিব জীবন স্বল্প, আর পরকালীন জীবন অন্থীন । সেই অনন্ত জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা সবার হৃদয়ে থাকাটা স্বাভাবিক। তাই সাহাবীগন প্রায় সময়ই সে পরকালীন জীবনের বিষয়ে নবীজীর কাছে জানতে চাইতেন ,আর পরকালীন জীবন নিয়ে খুবই চিন্তিত -বিমর্ষ থাকতেন । তেমনি একজন সাহাবীর আবেদনে ফুটে ওঠেছে উল্লিখিত হাদীস শরীফ । ক্বিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য আর তৎপরবর্তী অবস্থা ও ঠিকানা যে কি হবে ! ইত্যাদি অন্তরে রেখে সামান্য প্রশ্ন করতেই ইলমে গায়েবের নি’মাত প্রাপ্ত নবীকুল সরদার হুযুর আকরম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামা) জবাব না দিয়ে বরং তার অন্তরে লুক্বায়িত পরবর্তী তথা চুড়ান্ত প্রশ্নটির উত্তর দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন , তুমি ক্বিয়ামত পরবর্তী বেহেশত-দোযখের মধ্যে কোথায় থাকবে , সেটা জানতে চাচ্ছ ? তাই জেনে নাও , তোমার অন্তরে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের ভালবাসা যদি থেকে থাকে , তাহলে তুমি বেহেশতে রাসুলের সাথেই থাকবে । সুবহানাল্লাহ !

এ ভাবে আরো কত সাহাবীকে নবী-ই-পাক দুনিয়ায় থাকাবস্থায় বেহেশতের সুসংবাদ দিয়েছেন । নবী-ই-করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)এরশাদ করেন । ” যে যাকে ভালবাসে , সে তার সাথেই থাকবে ।” আল্লাহ আমাদের কে সত্যিকারার্থে নবীপ্রমিক হিসেবে কবুল করূন; আ-মিন।                                                              

Post a Comment

 
Top